রাজশাহীতে ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার : মঙ্গলবার ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বে-সরকারি ভবনসমূহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে ৫৪তম মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সংস্থা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান।
সকাল আটটায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সাথে সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে তিনি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৭৫’র ১৫ আগস্ট ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বক্তৃতা করেন। ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতির ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে এ দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নয় মাসের মরনপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে।
দেশ এখন সবদিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদেরকে দেশের আইন-কানুন সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে, সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনিসুর রহমান, আরএমপি’র কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, পুলিশ সুপার মো: সাইফুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সকাল দশটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুনঃ   রাতে বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ,উত্তাল বুয়েট

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার দেশে সোনার মানুষ গঠন করাই মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে ওই অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন, কিন্তু একদল বিপথগামী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে তাঁর সোনার বাংলা নির্মাণের কাজ থমকে যায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই অসম্পূর্ণ কাজ করে চলেছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের কাতারে উন্নীত হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ   নগর পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৪ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার

তিনি সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাজেটের আকার বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, আমাদের আবাসন সুবিধা বেড়েছে। আমাদের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা; যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। আগে আমাদেরকে খাদ্য আমদানি করতে হতো, এখন আমরা রপ্তানি করতে পারি।

ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, এমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখে খোদ পাকিস্তানও আমাদের উন্নতির মূলমন্ত্র খোঁজ করছে। স্বাধীনতার পর অনেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, এখন তারাও আমাদের উন্নয়নের প্রশংসা করছেন। দেশকে আরও এগিয়ে নিতে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভায় আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর (অব.) ড. মু. শামসুল আলম, বীর প্রতীক।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, পুলিশ সুপার মো: সাইফুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ আব্দুল হাদী ।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাসভার শুরুতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।