দুর্ভোগের অপর নাম ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র প্রবেশপথ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের সড়কে।

সারাদেশের অন্য মহাসড়কগুলোতে একাধিক লেন থাকলেও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক একলেন বিশিষ্ট। এছাড়া এই মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে ধীরগতির অবৈধ যানবাহন। এতে করে বাড়ছে দুর্ভোগ। সড়ক ব্যবহারকারীদের দাবি, দ্রুতই এই মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে এই মহাসড়ক একাধিক লেনে উন্নীত করতে হবে।

এই সড়কের মাদারীপুরের মধ্যে রয়েছে ৪৮ কিলোমিটার। এই সড়কে গত ৬ মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯টি। এতে ৯ জন নিহত হয়েছে আহত হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত।

সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই মহাসড়কে প্রতিদিন ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে।

সম্প্রতি মুকসুদপুরের ছাগলছিড়া নামক স্থানে গত বুধবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫ জন। এসময় প্রায় দুই ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, মহাসড়ক সরু এবং ধীরগতির অবৈধ যানবাহনের কারণেই এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

এতে করে যাত্রীর নষ্ট হয়েছে কর্মঘণ্টা। বেড়েছে দুর্ভোগ। ব্যস্ততম এই সড়কে প্রতি মিনিটেই যাওয়া-আসা করে বিভিন্ন যানবাহন। সড়ক সরু এবং চলছে ধীরগতির অবৈধ যানবাহন। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে মহাসড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   কাটাখালী পৌরসভার মেয়র হলেন রাবেয়া সুলতানা মিতু

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ হয়ে ফরিদুপরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এ মহাসড়কটি মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রশস্ত। এরমধ্যে অনেকস্থানে মহাসড়কটির অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নড়বড়ে। ১৯৬০-৬৫ সালের মধ্যে মাত্র পাঁচ টন বহন ক্ষমতা সম্পন্ন ১২ ফুট প্রশস্ত মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। এরপর বিগত ৬০ বছরে দুই পাশে আরও ৬ থেকে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হলেও বহন ক্ষমতা আর বাড়েনি। অথচ যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক শতগুণ। ফলে বেড়েছে দুর্ভোগ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণে সরকার অর্থ ছাড় করে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ছয় লেন মহাসড়কের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। কিন্তু পরামর্শক চূড়ান্ত নকশা জমা দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ ২০২০ সালে নির্ধারিত থাকলেও ২০২৪ সালে এসেও তা আলোর মুখ দেখেনি। একইসঙ্গে দাতার অভাবে প্রকল্পটি স্থবির অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে এ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। একইসাথে অপ্রশস্ত ও নড়বড়ে মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিত গতির যানবাহনে দক্ষিণাঞ্চলের অগণিত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ   জুমাতুল বিদা আজ, বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল

মাদারীপুর সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন বলেন, একলেন বিশিষ্ট এই সড়কটিতে প্রতিদিন ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে। অথচ বহুলেনের চট্রগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ২২ হাজার গাড়ি চলাচল করে।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু সড়ক প্রশস্ত হয়নি। সরু সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

তিনি দ্রুত ব্যস্ততম এ মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নীত করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মারুফ রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য কাজ করছি। গত ছয় মাসে শুধু মাদারীপুরেই নিহত হয়েছে ৯ জন।

মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হাসান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে সড়ক প্রশস্তকরণ করা শুরু করা যাবে। ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণে কারা অর্থায়ন করবে সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।