স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৬ দিন। শেষ সময়ে রাজশাহীতে জমতে শুরু করেছে পশুর হাটগুলো। সাধ্যের মধ্যে পছন্দের কোরবানির পশু কিনছেন ক্রেতারা। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতারা ৩৩ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা মণ টার্গেটে কোরবানির গরু কিনছেন। গতকাল সোমবার রাজশাহীর পবা উপজেলার মাসকাটাদিঘী স্কুল মাঠে বসেছে পশুর হাট। হাটটিতে দুপুরের পরে আসতে শুরু করে কোরবানির পশু। ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষিতে জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। হাটের বেশির ভাগ গরু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাড়িতে লালনপালন করা বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এ বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি- প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। আর পবিত্র ঈদুল আজহায় এ বছর রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। তার মধ্যে দেশি জাতের ষাঁড়গুলোর চাহিদা বেশি। হাটে ৭০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে দাম এমন গরুর চাহিদা বেশি। আর মাঝারির মধ্যে সাত ভাগের হিসেবে ১ লাখ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দামের গরু ও ক্রেতা তুলনামূলক বেশি। তবে দুই লাখ বা তার বেশি দামের গরুর ক্রেতা তুলনামূলক কম রয়েছে পৌরসভার এই হাটটিতে।
হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা মুরাদ হোসেন জানান, কোরবানির গরুর দামের চেয়ে বড় বিষয় পছন্দ। হয় দুই হাজার টাকা বেশি হবে, না হয় দুই হাজার টাকা কম হবে। পছন্দ হলে ২-৩ হাজার টাকা বাধে না। হাটে তিন মণ ওজন টার্গেটের গরুর দাম বিক্রেতারা চাচ্ছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। একটা গরুর দাম ৮৫ হাজার টাকা বলেছেন তিনি। কিন্তু দেয়নি বিক্রেতা। হাটে ক্রেতারা ৩৩ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা মণ টার্গেটে কোরবানির গরু বিক্রি হচ্ছে। ৩৩ হাজার টাকা মণ হলে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ছে ৮০০ টাকার কিছু বেশি। আর ৩৮ হাজার টাকা মণ হলে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ছে সাড়ে ৯০০ টাকা।
১ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকায় সাড়ে চার মণ টার্গেটে গরু কিনেছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরুটির মাংস কতটুকু হবে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে সাড়ে ৪ মণ হবে। প্রথমে গরুর দাম চেয়েছিল দেড় লাখ। আমরা ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাম বলি। পরে দামাদামির একপর্যায়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকায় গরুটি কেনা হয়। যেহেতু বাড়িতে গরু রাখার জায়গা নেই, তাই গরুর মালিক শামসুর ইসলাম চাঁদ রাত পর্যন্ত লালনপালন করে দেবেন। কাটাখালী হাটের ইজারাদারা জানান, এখানে শুধু পশু ছাড় করা হয়। দাম লেখা হয়। তবে কে কত মণ টার্গেটে গরু কিনলো সেটা তারা বলতে পারবেন না। এটা ক্রেতা-বিক্রেতারাই ভালো জানেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু কাটাখালী পশুর হাট নয়, সপ্তাহজুড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসছে পশুর হাট। সপ্তাহের শুরুতে শুক্রবার ও সোমবার কাটাখালী পশুর হাট, শনিবার ও মঙ্গলবার পুঠিয়ার বানেশ্বর পশুর হাট, রোববার ও বুধবার নগরীর সিটি পশুর হাট ও বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পশুর হাট। এছাড়া সপ্তাহের কোনো না কোনো দিন তানোরের মুন্ডুমালা, মোহনপুরের কেশরহাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জহাট ও দুর্গাপুরে পশুর হাট বসছে।
অপরদিকে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট নগরীর সিটি হাট। সপ্তাহে দুই দিন বসা পশুর হাট জমেছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে জমেছে হাটটি। এই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন কোরবানির পশু কিনতে। সিটি হাটে গরু ও মহিষ বিক্রি হয়। গরু ব্যবসায়ী ও ইজারাদার বলছেন, এ হাটের মুল ক্রেতাই হলো বাইরের বড় ক্রেতারা। যারা বড় বড় গাড়ি করে গরু কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা কম এসেছে। তার পরও জমেছে কেনা বেচা। যেহেতু আগামী বুধবার সিটি হাট রয়েছে। সেই দিন বাইরের ব্যবসায়ীরা হাটে নামলে গরু বেশি কেনাবেচা হবে।
সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসেনি। এ কারণে হাট জমেনি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল রোববার থেকেই হাট জমে উঠবে। এখন দেখা যাক সামনের দিনগুলো কেমন হয়।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরের তুলনায় এবারও চাহিদার চেয়ে বেশি পশু আছে। রাজশাহীতে পর্যাপ্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এবার উৎপাদন খরচ বেশি, এবার দামও কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।