অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী ২৫ মে। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে (১১ জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয়জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সর্ম্পককে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন?
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক। কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।’
কবির জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকার গত ১৫ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে বলেও বাণীতে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেছেন।
এদিকে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাধিক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালের নজরুল অডিটোরিয়ামে চলছে তিন দিনব্যাপী উৎসব। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এটি উদ্বোধন করেছেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান এমপি। এছাড়া ত্রিশালের নজরুল স্কুল মাঠে বসেছে নজরুল মেলা।